সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাত্রী, বৃষ্টি ও আমি

জানালার থাই পেরিয়ে আমার কানে ওর আহবান আসতে বেশ সময় লেগে গেলো। কিন্তু যখনই টের পেলাম ও এসেছে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। সোজা ছাদে গিয়ে ঠান্ডা ভেজা দোলনায় বসে পড়লাম।

আকাশ থেকে নেমে ব্যাকুল করা স্পর্শে আমাকে শিহরিত করে দিলো। ধিরে ভিজতে লাগলাম। ক্যামন যেনো একটা ভালোলাগা। আসলে বলার মতো উপযুক্ত কোনো শব্দ আমার ভান্ডারে উপস্থিত নেই মনে হয়। কি আর করার তবুও লিখতে যখন বসেছি উপলব্ধির কাছাকাছি তো অন্তত নিয়ে যেতে হবে।

আকাশের আদর খুব ধিরে এসে পড়ছে মাথায়, গায়, হাতে, পায়। রাতের রঙ মাখিয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো। হঠাৎ প্রচন্ড কান্না পেলো। কেনো জানিনা। অনেকেই বলে কাঁদা নাকি মেয়েদের স্বভাব। মানুষ কি আসলে ছেলে? নাকি মেয়ে?

ভেতরে যে জিনিষটা আছে ওটাকে আমার মনে হয় কেবলি মানুষ। নারী নয় পুরুষও নয়। কেনোনা রুহ বা আত্মা পুরুষ বা নারী হওয়ার কোনো যোগ্যতা রাখেনা। কেবল মাত্র শারীরিক প্রয়োজনে এটা নারী বা পুরুষ।

সাইকোলোজি ফিলোসোফি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কারনও হচ্ছে কেবলমাত্র আত্মার কোনো দৃশ্যমান অস্তত্ত্ব না থাকা। যার কোনো দৃশ্যমান অস্তিত্ত্ব নেই সে কি করে পুরুষ অথবা নারী হয়? এজন্য কারো আচরনকে কোনো নির্ধারিত কিছুর মধ্যে সিমাবদ্ধ করতে চাইনা। তবে আজকাল পুরুষ বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে হিংস্রতা অথবা কঠোরতা কিংবা প্রচন্ডতায় পূর্ণ একটি আত্মা।

এসবের কোনোটাই একজন পুরুষের জন্য শোভনীয় নয়। ভাবতে ভাবতে আর চোখের নোনা জল ও আকাশের মিষ্টি জলের প্রবাহে কখন যে ভিজে একদম জুবুথুবু হয়ে গেছি তা টের ই পাইনি। পুরো শহড়টাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছিলো। বৃষ্টির আদরে যেনো সে তরতাজা হয়ে উঠেছে। চক চক করছে। রাত্রীর বাতিগুলো প্রতিফলিত হচ্ছিলো ভেজা দেয়ালে দেয়ালে।

অনেক দিনের অজানা দূঃখের পোড়া যন্ত্রনাগুলো ধিরে গলে গলে পড়ে যাচ্ছে। ব্যথা শূন্য একটা মানুষের অনুভুতিগুলো বেশ অদ্ভুত। যেমন আমার এখন ছাঁদ থেকে লাফিয়ে আকাশে উড়ে গিয়ে বৃষ্টির সাথে সখ্যতা গড়তে মন চাইছে। মন চাইছে মেঘের গায় হেলান দিয়ে মিটি মিটি করে জ্বলতে থাকা তারাদের সাথে চুটিয়ে প্রেম করি। এতে নিশ্চই মুরুব্বিদের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

ঐ অসম্ভব প্রেম থেকে ফিরে আসি বাস্তবে। একজন প্রিয়জনের সাথে প্রেমের ইচ্ছায় নেমে আসি ছাঁদ থেকে। ভেজা শরীরে শাওয়ারে নিচে নিজেকে ছেড়ে দেই। কৃত্রিম এই বৃষ্টিতে নিজেকে ধুয়ে মুছে- স্রষ্টার সমিপে নিজেকে হাজির করে দেই। আজকালের প্রেমিক প্রেমিকাদের মতোই আমিও আমার সব কথা সিজদায় তাকে বলে যাই। সুখের অনুভুতি, দুখের অনুভুতি- নীল কষ্টের জ্বালা, আর বিপন্ন বিষন্নতার প্রহরগুলো। অগনন অবাধ্যতার নাম ধরে ধরে বলে যাই- বলে যাই মানুষের অবর্ণনীয় যন্ত্রনামুখর বিদগ্ধ সময়ের কথা-- আবার অশ্রুরা নেমে আসে চোখের কোলে। যার কাছে আমার ফিরে যাওয়া সেই আপন প্রভুকে আমার আনন্দ আর বেদনা গুলো শেয়ার করে যাই নির্দিধায়।

অবারিত প্রশান্তি আমাকে ছুঁয়ে গেলো। আমি জানিনা এর মাঝে কি আছে!! তবু কিছু আছে- নয়তো কেনো? কেনো বুকের মধ্যে এমন প্রশান্ত সমূদ্র সম স্থিরতা? কেনো প্রবল জলোচ্ছাসের শক্তিশালী আঘাতকেও নির্মলতায় রুপান্তর করে?

আমি জানি- আমি বিশ্বসী কিন্তু অনেক অবাধ্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুদুর চোখে সমুদ্র

প্রায় প্রতিদিনের মতই আজো ত্রস্তপায় সন্ধ্যারা ভীত ক্লান্ত গার্মেন্ট শ্রমিক হাছিনার ব্যাথায় কাতর হাটুর উপর ভর করে পৃথিবীর বুকে নেমে এলো। পৃথিবীর কি আসলে বুক আছে? উহু!! তাতো থাকার কথা নয়। সবটাই পিঠ। বলা উচিৎ পৃথিবীর পিঠে নেমে এলো। সাধারনত আমরা পিঠটাকে আবার কোল বলতে পছন্দ করি। সাহিত্যিক একটা ভাব নিয়ে বলা যায় ক্লান্তিকর বিরক্তভরা অন্ধকার তার গাঢ় নীল রঙএ লাশের গায় জড়ানো শেষ কাপড়গুলোর মত পৃথিবীর কোলকে আবৃত কছে। এইসব উলটাপালটা ভাবতে ভাবতে জানালা দিয়ে রাত্রীর ভয়াবহ আগমনে পলায়নপর সূর্যের শেষ উঁকিঝুকি দেখে জীবন সায়াহ্নে অলস দিনগুলো কাটাচ্ছে মাহমুদ। ধিরে পরিচিত সব বিদায় নিচ্ছে। কিছুদিন হলো ঘাসফরিং উড়ে গেছে, তার আগে বৃষ্টিরদাগ ধুয়ে মুছে গেছে পৃথিবীর কোল থেকে। বিদ্রোহী প্রাণ নিভু নিভু করে খুব নিচু স্বরে তার নাতনীর সাহায্যে মোবাইলে বিড়বিড় করে অস্পষ্ট স্বরে। ওদিকে নষ্টালজিকের চুল পেঁকে বুড়ো। তারিক, শিহান সবার বুঝি সন্ধ্যা ঘনালো। একসময় এই রঙ্গীন জগতের সব রঙই চোখে ধুসর হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু তখন আসলে কোন চশমা লাগিয়েও জগতের রঙ গুলোকে ফ্যাকাশে হওয়া থেকে নিস্তার দেয়া যায় না। ওটাই আসলে ধারিত্রীর র

নামাজি কাজ ফেলিয়া

আজ নামাজি কাজ ফেলিয়া ছুটিছে দেখ সিজদাতে, এমনি করে জগত ভরে হোক জমায়েত রোজ রাতে। খোদার ঘরে দরুদ পরে হাজার হাজার মুসলমান; দোর খোলা দিল পথ ভোলা দিল সবমিলে আজ উজাড় প্রাণ। হয় মুসাফির বছর ভুলে আজ কেবলি ঝুকলো শির। কেমন করে আঙ্গুল তোল? তুমিই কে বা মহান পীর? খোদার কাছে কাঁদল অবুঝ কাঁদল পাপী, কদরদান। কান্নাটা তো আসল ছিল, হোক না সে খুব অচলপ্রাণ! এইচ আল বান্না © 2017

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু?? জীবনকি এভাবেই তোমাকে বহমান স্রোতধারায় ভাসিয়ে নিজ়ে যাবে?? আজ কোনো কঠিন শব্দ গুচ্ছ আমাকে আক্রমন করেনা... আমি নিজেই আপন ব্যাথায় আহত... বুকের কোথাও খেজুর কাঁটার খোঁচার মতো তীক্ষ্ণ ব্যাথা ধীরে প্রশস্ত অবয়ব নেয়... নিয়ে নেয় একাই পর্যদুস্ত... পরাজিত হয়ে গেলে তুমি?? তুমি না বিজয় শেখাও??? তুমি না আকাশকে পকেটে পুরে মেঘের হাওয়াই মিঠাই আপন মুখে আপন সুখে সুখ মেলাও!! দেখবে কোথায় আকাশ লুকায় কান্না ঝড়ায় পাহাড় গায়ে নয়তো কোথাও বিষন্নতাও ডুকরে কাঁদে মাঝির নায়ে একটু ধারে জীবন পারে কোন বেহালা বাদক বসে... ভেজায় তাহার আপন সুরে এক অবেলার দূঃখ রসে? উত্থান পতনের ক্রমাগত আঘাতে বেসামাল জীবন তোমার... আমিও ভাবি... হয়তো বেশী দিন নেই, আমার দুখের পাপড়ি ভাঙ্গার... অনেক সুখেই কাটছে আমার দিন প্রতিক্ষন সন্ধ্যা লগন... একজনাকেই সব শপেছি... প্রার্থনাতে তাই জপেছি... অনেক কষ্ট আর বেদনা নিয়ে তুমি পালিয়ে যাবে?? তিনিকি এর চেয়েও বেশী কষ্ট কাউকে দেননি?? পরীক্ষা করেননি?? হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??