সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৃষ্টি তুমি বড্ড অদ্ভুত সুন্দর

বৃষ্টি হলেই কেমন যেনো অদ্ভুত একটা অনুভুতি টের পাই বুকের ভেতর। আচ্ছা মনটা কি বুকে থাকে? নাকি মাথায়?? থাক এটা নিয়ে আর একদিন ভাবা যাবে।

ও -- আমি কিন্তু কখনোই ছাতা মাথায় দেইনা। লেপটপটাকে কভার করার জন্য একটা ওয়াটার প্রুফ ব্যগে পুরে কাঁধে করে নেমে যাই। ভিজতে ভিজতে শহরের সেই সব মানুষদের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করি যারা মনচাইলেও বৃষ্টি থেকে নিজেদেরকে আড়াল করতে পারেনা। ওরা বসে থাকে অভার ব্রিজের নিচে। কিন্তু ওখানেও বৃষ্ট তার গড়িয়ে পড়া পানিতে ওদেরকে ভিজিয়ে দেয়। যাদের চোখের জল বৃষ্টির পানিতে মিশে এই মাটিকে আর উর্বর হতে সাহায্য করে।

যখন চুলগুলো মাথায় লেপ্টে যায়- চুলের আগায় টুপ টুপ করে পানির ফোঁটাগুলো পড়তে থাকে- আর কানে ইয়ার ফোনে বাঁজতে থাকে শ্রীকান্তের -আমার সাড়াটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি- কিংবা- তাওসিফের- বৃষ্টি ঝরে যায় দুচোখে গোপনে- শুনতে শুনতে অনেক দূরে কোথায় হারিয়ে যাই।

এটা কিন্তু মোটেও বাড়িয়ে বলছিনা। এমনিতে আমি তেমন একটা বাহিরে যাইনা। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমি সারাক্ষণ পথে পথে ঘুড়ে বেড়াই। আমার তেমন একটা জ্বরটর হয়না আলহামদুলিল্লাহ।

সেদিন একজন বুড়ো ভিক্ষুককে দেখলাম মসজিদের সামনে বসে তার দূর্বল হাড়গোড় প্রদর্শনে আমার মানবিক বোধ জাগাতে চাইছে। আমি আপন জনের মতো তার জীর্ণ জং পড়া হাতে নিজের হাতটা জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। আকাশে ঘন মেঘের আনাগোনা ছিলো- আনাগোনা ছিলো আমার আর তার চোখেও। আমি তার মাথায় হাত বুলাতেই জানিনা-সুখে কিংবা দুখে- তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখি। বৃষ্টিরা নামি নামি করে নামতে চাইছে। আমি তাকে বললাম চাচা বৃষ্টি আসছে- তার চোখের তারার স্থিরতা দেখে টের পেলাম আমার কথা শূনার শক্তি অনেক দিন আগেই তাকে ছেড়ে বিদায় নিয়েছে। তার এক হাতের নিচে আমার কাঁধ দিয়ে তাকে জড়িয়ে মসজিদের বারান্দায় বৃষ্টির আঘাত থেকে বাঁচাতে সরিয়ে নিতে চাইছিলাম।

উজ্জ্বল পোষাক পড়া মসজিদ কমিটির বুড়ো ভদ্রলোক আমাকে ভিষন কড়া দৃষ্টি আর জিহবার আচরে বিক্ষত করে বললো উনাকে এখানে বসানো যাবেনা। নামাজিদের সমস্যা হবে। আমি সমান তেজে বললাম- মসজিদ স্রষ্টার ঘর এখানে সকল সৃষ্টির আশ্রয় নেয়ার অধিকার আছে। কিছুটা চুপশে গিয়ে হয়তো আমাকে বেয়াদব ভেবেই নরম করে বললেন ওপাশে সেক্টর অফিস আছে ওখানের বারান্দায় নিয়ে যান।

আমি তাকে নিতে গিয়ে টের পাই পৃথিবীর যন্ত্রণাতুর সময়ের ছোবলে পরাক্রান্ত এই কাঁধে তুলে নেয়া উপহাসের ইতিহাস তার পা গুলোকে সচল রাখতে পারছিলেননা। বারান্দায় তাকে বসানো মাত্রই বৃষ্টি তার সকল শক্তিতে ঝাপিয়ে পড়লো মাটির পৃথিবীতে। চাচা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

আমি বেড় হয়ে বৃষ্টির বুকে আমার সকল সুখ নিয়ে নিজেকে ছেড়ে দিলাম। আহ!! কি সুখ আমার। আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে যাচ্ছে খুব ধিরে। ভিজতে ভিজতে আবার পিচঢালা পথে-- আমি-- আর বৃষ্টি--

রাস্তায় পানি জমেগেলে সেই জমা পানিতে পথশিশুদের কাগজের নৌকা ভাসানোর উৎসব দেখে যাই। ভাবি আমি হয়তো ওদেরই একজন। আমাকে ওদের সাথে পেয়ে ওদের আনন্দ যেনো আরো বেড়ে যায়। শরীরের এক চিলতে কাপর পানিতে ভিজে শরীরের দৃশ্যমান হাড়ের সৌন্দর্য আরো ভয়াবহ করে উপস্থাপন করে আমাদের সামনে।

কিন্তু বৃষ্টি থেমে গেলেই- মন খারাপ করে আবার আমি আমাদের একজন হয়ে ফিরে আসি আমার যাপিত জীবনে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুদুর চোখে সমুদ্র

প্রায় প্রতিদিনের মতই আজো ত্রস্তপায় সন্ধ্যারা ভীত ক্লান্ত গার্মেন্ট শ্রমিক হাছিনার ব্যাথায় কাতর হাটুর উপর ভর করে পৃথিবীর বুকে নেমে এলো। পৃথিবীর কি আসলে বুক আছে? উহু!! তাতো থাকার কথা নয়। সবটাই পিঠ। বলা উচিৎ পৃথিবীর পিঠে নেমে এলো। সাধারনত আমরা পিঠটাকে আবার কোল বলতে পছন্দ করি। সাহিত্যিক একটা ভাব নিয়ে বলা যায় ক্লান্তিকর বিরক্তভরা অন্ধকার তার গাঢ় নীল রঙএ লাশের গায় জড়ানো শেষ কাপড়গুলোর মত পৃথিবীর কোলকে আবৃত কছে। এইসব উলটাপালটা ভাবতে ভাবতে জানালা দিয়ে রাত্রীর ভয়াবহ আগমনে পলায়নপর সূর্যের শেষ উঁকিঝুকি দেখে জীবন সায়াহ্নে অলস দিনগুলো কাটাচ্ছে মাহমুদ। ধিরে পরিচিত সব বিদায় নিচ্ছে। কিছুদিন হলো ঘাসফরিং উড়ে গেছে, তার আগে বৃষ্টিরদাগ ধুয়ে মুছে গেছে পৃথিবীর কোল থেকে। বিদ্রোহী প্রাণ নিভু নিভু করে খুব নিচু স্বরে তার নাতনীর সাহায্যে মোবাইলে বিড়বিড় করে অস্পষ্ট স্বরে। ওদিকে নষ্টালজিকের চুল পেঁকে বুড়ো। তারিক, শিহান সবার বুঝি সন্ধ্যা ঘনালো। একসময় এই রঙ্গীন জগতের সব রঙই চোখে ধুসর হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু তখন আসলে কোন চশমা লাগিয়েও জগতের রঙ গুলোকে ফ্যাকাশে হওয়া থেকে নিস্তার দেয়া যায় না। ওটাই আসলে ধারিত্রীর র

নামাজি কাজ ফেলিয়া

আজ নামাজি কাজ ফেলিয়া ছুটিছে দেখ সিজদাতে, এমনি করে জগত ভরে হোক জমায়েত রোজ রাতে। খোদার ঘরে দরুদ পরে হাজার হাজার মুসলমান; দোর খোলা দিল পথ ভোলা দিল সবমিলে আজ উজাড় প্রাণ। হয় মুসাফির বছর ভুলে আজ কেবলি ঝুকলো শির। কেমন করে আঙ্গুল তোল? তুমিই কে বা মহান পীর? খোদার কাছে কাঁদল অবুঝ কাঁদল পাপী, কদরদান। কান্নাটা তো আসল ছিল, হোক না সে খুব অচলপ্রাণ! এইচ আল বান্না © 2017

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু?? জীবনকি এভাবেই তোমাকে বহমান স্রোতধারায় ভাসিয়ে নিজ়ে যাবে?? আজ কোনো কঠিন শব্দ গুচ্ছ আমাকে আক্রমন করেনা... আমি নিজেই আপন ব্যাথায় আহত... বুকের কোথাও খেজুর কাঁটার খোঁচার মতো তীক্ষ্ণ ব্যাথা ধীরে প্রশস্ত অবয়ব নেয়... নিয়ে নেয় একাই পর্যদুস্ত... পরাজিত হয়ে গেলে তুমি?? তুমি না বিজয় শেখাও??? তুমি না আকাশকে পকেটে পুরে মেঘের হাওয়াই মিঠাই আপন মুখে আপন সুখে সুখ মেলাও!! দেখবে কোথায় আকাশ লুকায় কান্না ঝড়ায় পাহাড় গায়ে নয়তো কোথাও বিষন্নতাও ডুকরে কাঁদে মাঝির নায়ে একটু ধারে জীবন পারে কোন বেহালা বাদক বসে... ভেজায় তাহার আপন সুরে এক অবেলার দূঃখ রসে? উত্থান পতনের ক্রমাগত আঘাতে বেসামাল জীবন তোমার... আমিও ভাবি... হয়তো বেশী দিন নেই, আমার দুখের পাপড়ি ভাঙ্গার... অনেক সুখেই কাটছে আমার দিন প্রতিক্ষন সন্ধ্যা লগন... একজনাকেই সব শপেছি... প্রার্থনাতে তাই জপেছি... অনেক কষ্ট আর বেদনা নিয়ে তুমি পালিয়ে যাবে?? তিনিকি এর চেয়েও বেশী কষ্ট কাউকে দেননি?? পরীক্ষা করেননি?? হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??