সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যা থামলেই শেষ (একারনে চলবে)১০ ভাতের হোটেল

বাহ! কি চমৎকার। ওভার ব্রীজে উঠতে গিয়ে দেখি এক ভদ্রছেলে সুন্দর সিঁড়ির হাতলের উপর পা তুলে বসে হেসে হেসে ফোনে কথা বলেই চলছে। আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কাজে কামে থাকবেনা কথা শুধু কবে। সেই ছেলেদের জোয়ারে ভাসছে যে দেশ। রাত্রীর এই প্রাথমিক অংশটা সকালের মতোই ব্যাস্ত। সবাই সাড়াদিনের কর্ম সমাপ্ত করে দ্রুত পায় আপন নিবাসে পৌছুতে মরিয়া। সেখানে অপেক্ষা করছে আপন প্রিয়ার চকিত চাহনি। সন্তান বুঝি লুকিয়ে। দরজা খুলে ঢুকলেই অজানা আবস্থান থেকে বলে উঠবে আব্বু আমি কোথায় বলতো?

নাহ্‌! হয়তো ভুল বললাম। পেপারে তাকালে বিশ্বস্ততায় পরিপূর্ণ অভাবের রূপ দেখে আহত হই। থাক যা হয় হোক। চাইনিজ প্রযুক্তির মেইড ইন জিঞ্জিরা চার্জার লাইটগুলোর পসরা সাজিয়ে ব্রীজের উপর বসে আছে ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী। কয়েকটি নেইল কাটার আছে বেশ সুন্দর সুন্দর। অনেক ছোট এবং কিউট। বহুদিন হলো নখের সাথে আমার লেনদেন হয়না। বিশটাকায় একটা পকেটে পুরলাম। ওপারে নেমে হোটেলগুলোর সামনে রাস্তায় জমে থাকা কালো কালো পিচ্ছিল কাঁদা জুতোর তলায় জড়িয়ে গিয়ে বসলাম ঝুপরিতে। বাহিরে বৃষ্টির ফের আগমনি সংকেত। বাতাসে ভেজা গন্ধ। কাঠের চেয়ার আর টেবিলগুলো খদ্দেরের অপেক্ষায়। মুখমুখি। ২৩ বছরের যুবক। জামাকাপড়ে আন্দাজ হয় গার্মেন্ট শ্রমিক। কিজানি। হয়তো ভুল ও হতে পারে। দুটি পরোটা আর পিরিচে ডালভাজি সামনে নিয়ে বসে আছে। শ্যামলা চামড়ার মুখে কিছুটা বিরক্তির হলকা। গ্লাস দেন! গ্লাস দেন! গ্লাস দেন! অসহিষ্ণু কন্ঠে বলেই চলছে। খাবার পরিবেশনকারী গোমড়া মুখো লোকটা অন্যান্যদের নিয়েই ব্যাস্ত। এদিকে খেয়াল করছেনা। আমি বসে বসে তেল চিটচিটে ময়লা দেয়ালে ঝোলানো বঙ্গবন্ধু ও হাসিনা আপার ছবিগুলো দেখছি। এখানে একসময় জিয়া আর খালেদার ছবি ছিলো। লোকটা এলে ছেলেটি কিঞ্চিৎ ধমকে বলে উঠলো কখন থেকে বলতেসি গ্লাসটা পালটে দেন কোনো খবর নাই। লোকটা বললো আপনিতো মিয়া গ্লাস দিতে কইসেন। গ্লাস তো আছেই তাই আমি খেয়াল করিনাই। আগে কইবেন্না!! ধোয়া গ্লাস দিয়ে গেলো। পানি ঢালবে। দেখে জগে পানি নেই। বিরক্তির মাত্রাটা আরো এক ডিগ্রি বেড়ে যায়। পিচ্চি ছেলেটাকে ডাকছে ঐ ছেমড়া... এই যে... ঐ... কে শুনে কার কথা। অবশেষে এই অংকের ও সমাধান হলো।

ডায়াল্যক্টস ডেভালপড হয় দুই ভাবে। রিজিওনাল ডায়ালেক্টস। আর সোশাল ডায়ালেক্টস। দ্বিতীয়টির জলন্ত উদাহরন হচ্ছে আমার সামনে বসা এই ছেলেটি। এজুকেশন ও সোশাল ক্লাস ল্যাংগুয়েজকে ডেভালপ করতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। ছেলেটির ভাষা আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছে সমাজে তার অবস্থান কোথায়। অথবা তার সোশাল আইডেন্টিটি নির্ভর করছে তার মুখ নিসৃত শব্দগুলো ও তার প্রকাশভঙ্গীর উপর। সবচেয়ে আশ্চার্য হচ্ছে সেও বাংলায়ই কথা বলছে। সাধারনত নিন্মশ্রেনীর মানুষদের ভাষার সাথে সুন্দর এমন অনেক অলংকৃত শব্দ থাকে যেগুলো উচ্চারন করতে লজ্জা লাগে। অথচ তাদের কাছে এসব ডাল ভাত। অনেকদিন থেকে ভেবে যাচ্ছি এর সমাধান কিভাবে সম্ভব! এর মধ্যে আরো কিছু উৎপাত যোগ হলো। উচ্চবিত্তের ভাষা আর নিন্ম বিত্তের ভাষার মাঝে খুব একটা ফারাক নেই। এরা যেমন কথায় কথায় গালাগাল করে ওরাও কম যায় না। ব্যাপারটা কি? হিসাব মেলানো কঠিন। অবশ্য উচ্চবিত্তের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের মধ্যে অনেকেই ষ্ট্যান্ডার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করছে। তবে মনে হচ্ছে এই যুগে এসে নোয়াম চমস্কির পরও আরো কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজনিয় হয়ে দাড়িয়েছে। যেমন ডায়ালেক্টস এর ক্ষেত্রেই আরো একটা ডেভালপমেন্ট প্রয়োজন। যেটা সংঘটিত হচ্ছে কিন্তু কাগজে কলমে নেই।

মিডিয়া ডায়ালেক্টস। ভিন্ন ভিন্ন রিজিওন যেমন ভিন্ন ভিন্ন ডায়লেক্ট সৃষ্টি করে, সোশাল ক্লাস যেমন ভিন্ন ভিন্ন ডায়ালেক্ট সৃষ্টি করে তেমনি মিডিয়াও ভিন্ন ডায়ালেক্ট তৈরির এক বিশাল কারখানা। বিশেষ করে এফ এম আর ফারুকির নাটক। মিডিয়া ডায়ালেক্টকে লিঙ্গুয়েষ্টিক্সের অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি। সেই সাথে কাহিনির বাকী অংশের বিবরন দিচ্ছি।

ভাবলাম ছেলেটাকে কিছুটা আদব কায়দা শেখাতে হয়। আমি ওয়েটারকে ডাকলামঃ ভাইজান... আমাকে দয়া করে ভাত দেয়া যাবে? দুজনেই মনে হলো অচেনা কিছু দেখছে! ওয়েটার তরিঘরি করে বলে উঠলো জি এক্ষুনি দিচ্ছি। সাথে কি খাবেন? আমি বললামঃ জি শুধু আলু ভাজি দিলেই চলবে। মুখমুখি বসা লোকতা আড় চোখে আমাকে অবলোকন করছে আমি টের পাচ্ছি। এবার পিচ্চিটার পালা। ওকে ডেকে বললামঃ এই যে ভাইয়া আমাকে একটু কষ্ট করে একতা লেবু আর কাঁচা মরিচ দেবে? ও তো দৌড়ে নিয়ে এলো। আসলে কি... সবাই এভাবে ধমকা ধমকি দিয়ে কথা বলায় তাদের দৃষ্টি আকর্ষন হয়না। তাই কেউ ভালো আচরণ করলে অবাক হয় ও তাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করে। মুখমুখি বসে যুবক নিচু হয়ে গিলে চলছে পরোটা আর ডাল ভাজির মিশ্রণ। খাওয়া শেষে আরো একবার আমাকে দেখে নিয়ে চলে গেলো। আমিও পঁচিশ টাকা বিল সেই সাথে এক গাল হাসি আর একটা ধন্যবাদ দিয়ে বিদেয় নিলাম সাধারন এই ভাতের হোটেল থেকে। আমি জানিনা এতে ঐ লোকটি কিছু শেখবে কিনা... তবুও একটু চেষ্টা করলাম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুদুর চোখে সমুদ্র

প্রায় প্রতিদিনের মতই আজো ত্রস্তপায় সন্ধ্যারা ভীত ক্লান্ত গার্মেন্ট শ্রমিক হাছিনার ব্যাথায় কাতর হাটুর উপর ভর করে পৃথিবীর বুকে নেমে এলো। পৃথিবীর কি আসলে বুক আছে? উহু!! তাতো থাকার কথা নয়। সবটাই পিঠ। বলা উচিৎ পৃথিবীর পিঠে নেমে এলো। সাধারনত আমরা পিঠটাকে আবার কোল বলতে পছন্দ করি। সাহিত্যিক একটা ভাব নিয়ে বলা যায় ক্লান্তিকর বিরক্তভরা অন্ধকার তার গাঢ় নীল রঙএ লাশের গায় জড়ানো শেষ কাপড়গুলোর মত পৃথিবীর কোলকে আবৃত কছে। এইসব উলটাপালটা ভাবতে ভাবতে জানালা দিয়ে রাত্রীর ভয়াবহ আগমনে পলায়নপর সূর্যের শেষ উঁকিঝুকি দেখে জীবন সায়াহ্নে অলস দিনগুলো কাটাচ্ছে মাহমুদ। ধিরে পরিচিত সব বিদায় নিচ্ছে। কিছুদিন হলো ঘাসফরিং উড়ে গেছে, তার আগে বৃষ্টিরদাগ ধুয়ে মুছে গেছে পৃথিবীর কোল থেকে। বিদ্রোহী প্রাণ নিভু নিভু করে খুব নিচু স্বরে তার নাতনীর সাহায্যে মোবাইলে বিড়বিড় করে অস্পষ্ট স্বরে। ওদিকে নষ্টালজিকের চুল পেঁকে বুড়ো। তারিক, শিহান সবার বুঝি সন্ধ্যা ঘনালো। একসময় এই রঙ্গীন জগতের সব রঙই চোখে ধুসর হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু তখন আসলে কোন চশমা লাগিয়েও জগতের রঙ গুলোকে ফ্যাকাশে হওয়া থেকে নিস্তার দেয়া যায় না। ওটাই আসলে ধারিত্রীর র

নামাজি কাজ ফেলিয়া

আজ নামাজি কাজ ফেলিয়া ছুটিছে দেখ সিজদাতে, এমনি করে জগত ভরে হোক জমায়েত রোজ রাতে। খোদার ঘরে দরুদ পরে হাজার হাজার মুসলমান; দোর খোলা দিল পথ ভোলা দিল সবমিলে আজ উজাড় প্রাণ। হয় মুসাফির বছর ভুলে আজ কেবলি ঝুকলো শির। কেমন করে আঙ্গুল তোল? তুমিই কে বা মহান পীর? খোদার কাছে কাঁদল অবুঝ কাঁদল পাপী, কদরদান। কান্নাটা তো আসল ছিল, হোক না সে খুব অচলপ্রাণ! এইচ আল বান্না © 2017

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু?? জীবনকি এভাবেই তোমাকে বহমান স্রোতধারায় ভাসিয়ে নিজ়ে যাবে?? আজ কোনো কঠিন শব্দ গুচ্ছ আমাকে আক্রমন করেনা... আমি নিজেই আপন ব্যাথায় আহত... বুকের কোথাও খেজুর কাঁটার খোঁচার মতো তীক্ষ্ণ ব্যাথা ধীরে প্রশস্ত অবয়ব নেয়... নিয়ে নেয় একাই পর্যদুস্ত... পরাজিত হয়ে গেলে তুমি?? তুমি না বিজয় শেখাও??? তুমি না আকাশকে পকেটে পুরে মেঘের হাওয়াই মিঠাই আপন মুখে আপন সুখে সুখ মেলাও!! দেখবে কোথায় আকাশ লুকায় কান্না ঝড়ায় পাহাড় গায়ে নয়তো কোথাও বিষন্নতাও ডুকরে কাঁদে মাঝির নায়ে একটু ধারে জীবন পারে কোন বেহালা বাদক বসে... ভেজায় তাহার আপন সুরে এক অবেলার দূঃখ রসে? উত্থান পতনের ক্রমাগত আঘাতে বেসামাল জীবন তোমার... আমিও ভাবি... হয়তো বেশী দিন নেই, আমার দুখের পাপড়ি ভাঙ্গার... অনেক সুখেই কাটছে আমার দিন প্রতিক্ষন সন্ধ্যা লগন... একজনাকেই সব শপেছি... প্রার্থনাতে তাই জপেছি... অনেক কষ্ট আর বেদনা নিয়ে তুমি পালিয়ে যাবে?? তিনিকি এর চেয়েও বেশী কষ্ট কাউকে দেননি?? পরীক্ষা করেননি?? হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??