সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যা থামলেই শেষ (এ কারনে চলবে)৯ (ভাবনার পোষ্টমর্টম)

অনেক ভাবনা করে দেখলাম ভেবে কোনো লাভ নাই। তাই ভাবনা ছাড়াই যা মাথায় আসে তা লিখতে বসে গেলাম। কথা হচ্ছিলো মানব সভ্যতার অবনতির বিষয়ে। যুগে যুগে বহু মানুষ এই পতন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিষয়গুলো এমন ভাবে পরিবর্তনশীল যে গুটিকতক মানুষ ছাড়া বাকি সবাই ই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। আর সঠিক ভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছেনা আমাদের চিরন্তন নৈতিক বিষয়গুলো। বদলে যাচ্ছে সময়ের ধারাবাহিকতায় সকল কর্মকান্ডের পূর্ব সংজ্ঞা। তাহলে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে কি লাভ? কই? কেউ কি পেরেছে পতন রোধ করতে? হয়তো নির্ধারিত কিছু মানুষ সেই সব রিফর্মারদের অনুসরন করেছে। কিন্তু একসময় তারাও পরিবর্তিত হয়ে গেছে।


আসলে এই গতিটি পতন কিনা সেটা নিয়েও অনেকে ভাবনার পাটি বিছিয়ে বসেছেন... নাকি এটা কেবলই গতি। একটা রিক্সা দশনম্বর থেকে তেরো নম্বর যাবেই। এটা তার স্বাভাবিক গতি। বিলুপ্ত হয়েছে পেগান দর্শন। বিফলে গিয়েছে বনি ইসরাইলিয় সভ্যতা। টিকে থাকেনি মিশরীয় সংস্কৃতি। মুসলমানদের অবহেলায় মুসলিম দর্শনেরও পতন হয়েছে অনেকদিন আগে। সমাজতান্ত্রের বিবর্ণ কান্না এখনো রাশিয়ার পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।এখন মুসলমানদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন ও সকল প্রকার দুনিয়াবী ঝামেলা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুসলিম দর্শন, শ্রমিক যখন রাজ পথে তার জন্য সমাজতান্ত্রিক দর্শন, ব্যাবসায়ীদের জন্য পুঁজিবাদী দর্শন আর জনগনের পেটে লাথি মারার জন্য পশ্চিমা রাজনৈতিক দর্শন যা আবার তৃতীয় বিশ্বের জন্য বিশেষ সংস্করণ... সব দিক থেকে জোড়াতালিয় এই দর্শনের যুগে ভাবনারা কাঁথা গায়ে ঘুমাতেই বোধ হয় বেশি পছন্দ করবে। হয়তো পৃথিবী এভাবেই এগিয়ে যাবে তার মহা ধ্বংসের দিকে... আমরা কেবলই তা ত্বরান্মিত করতে বিস্তর আন্তরিক সহযোগিতা করছি।

আজ যখন শুকনো মুখে পেছনে রাখা আমার আঙ্গুলে নরম কোনো হাতের স্পর্শ পেলাম ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম... একটা বাচ্চা ছেলে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো বহুদিনের পানি না পাওয়া মরু অঞ্চলের বালুর মতো লাল হয়ে উচ্চবিত্তের রঙ করার চুলের উদ্দেশ্যে ফোকলা হাসছে। বৃষ্টির পানি বুঝি তাকে নিস্তার দেয়নি।পকেটে রাখা মিল্ক ক্যাণ্ডি থেকে একটার পোষাক খুলে দু আঙ্গুলে পরম মমতায় ওকে খাইয়ে দিয়ে ভাবলাম... আহা!! কার দোষে এই রুহুটি নির্যাতিত? পাশে দাঁড়ানো গুনী মানুষটিকে জিজ্ঞেস করলাম জানেন?? উনি বললেন এটাই তো ভেবে যাই। সাথে ভাবলাম আসলেই তার অবস্থানটা আমার কাছে একজন নির্যাতিতের অবস্থান। কিন্তু সে কি এটাকে তার সঠিক অবস্থান বলে মনে করছে? তার কি অনুভুতি আছে যে তার আরো একটু ভালো থাকার কথা?? নাকি সে তার চেয়েও খারাপ মানুষকে দেখে ভাবে আমি তার চেয়ে ভালো আছি...

তাহলে নির্যাতনের সংজ্ঞা কি পরিবর্তিত হয়ে গেল না? কেউ যদি তার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে পিঠ পেতে দেয় তাহলে কি তা নির্যাতন হয়? কেউ যদি মনে করে এটাই তার নিয়তি অথবা এজন্যই তার জন্ম তাহলে কি ওটা সঠিক ভাবে নির্যাতনের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব? সে তো নির্যাতিত হয়েও অসন্তুষ্ট নয়। নয়তো কেনো সে নিজেকে পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসছে না? তার অবস্থান নিয়ে সে যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে ঐ অবস্থানের জন্য দ্বায়ী বিষয়গুলো কি করে নির্যাতন হয়? আমি এই সমাজে উচ্চবিত্তের মতো সুবিধা ভোগ করছিনা। আমিও অনেক ভাবে নিগৃহীত হচ্ছি। উচ্চবিত্ত কারো দৃষ্টিতে আমিও হয়তো নানান ভাবে নির্যাতিত একজন মানুষ। কিন্তু আমার অবস্থানে যেহেতু আমি সন্তষ্ট তাই ঐগুলোকে নির্যাতন বলতে আমি বাধ্য নই। আমি হয়তো বলবো আমার নিয়তি। এখন কথা হচ্ছে যে সম্পদ কতটা হলে সেটাকে সহনীয় বলা যাবে এটা নিয়েই গোলমাল। এর কি নির্ধারিত কোনো মাত্রা আছে?

এদেশের মধ্যবিত্তরাই এক সময় সমাজ নিয়ে ভাবতো এবং কাজ করতো। অবশ্য সকল জাতিতেই সেই জাতি নির্মান ও তার গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজগুলো মধ্যবিত্তের হাতেই হয়। কারন উচ্চ এবং নিম্ন এই দুই শ্রেনী শুধু মাত্র উপার্জনের ধান্দায় মগ্ন থাকে। নিন্মবিত্তের টাকা নেই, তাই কিভাবে পেট চালানো যায় এই ভাবনায় প্রাণ ওষ্ঠাগত- আর উচ্চবিত্তের টাকা ভুরি ভুরি আছে বলে ঐ টাকা সামলানো এবং আরো জ্যামিতিক বৃদ্ধির উপায় নিয়ে উনারা ভারি ব্যস্ত। আর মধ্যবিত্তরা টেনে টুনে চালাতে পারতো বলেই হয়তো শত ব্যস্ততার ভিড়েও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতো। আজকে যারা সমাজে উচ্চবিত্ত হিসেবে জন্মগ্রহণ করছে তাদের বাবারা একসময় মধ্যবিত্তই ছিলেন। বিগত দশ বছরে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি যে হারে ধন উপার্জনের দিকে ঝুঁকেছে এবং এটাকেই (এমেরিকান ড্রিমের ভয়াবহ ইনফ্লুয়েন্স হিসেবে) নেশা এবং পেশা হিসেবে নিয়েছে তাতে করে সেই নিরাপদ সময়টুকুতেও নানান আপদের সম্মীলন ঘটিয়ে ফেলেছে।

এবং কাঁচা টাকার উপস্থিতিতে মগজের যে নিউরনগুলো সমাজের চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সেগুলো পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিনোদন সামগ্রীর ঝনাৎকারে। এই সব বিনোদনের মোহ কাটিয়ে সময় কোথায় যে এতটুকু ভাবনার অবকাশ পাওয়া যাবে? সমাজ হয়ে গেছে ভয়াবহ আমাজনের গহীনে হেটে যাওয়া পথহারা ভয়ার্ত নিঃস্ব কোনো পথিক যার প্রতিটি পথে পথে তার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যুর গহীন অন্ধকার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুদুর চোখে সমুদ্র

প্রায় প্রতিদিনের মতই আজো ত্রস্তপায় সন্ধ্যারা ভীত ক্লান্ত গার্মেন্ট শ্রমিক হাছিনার ব্যাথায় কাতর হাটুর উপর ভর করে পৃথিবীর বুকে নেমে এলো। পৃথিবীর কি আসলে বুক আছে? উহু!! তাতো থাকার কথা নয়। সবটাই পিঠ। বলা উচিৎ পৃথিবীর পিঠে নেমে এলো। সাধারনত আমরা পিঠটাকে আবার কোল বলতে পছন্দ করি। সাহিত্যিক একটা ভাব নিয়ে বলা যায় ক্লান্তিকর বিরক্তভরা অন্ধকার তার গাঢ় নীল রঙএ লাশের গায় জড়ানো শেষ কাপড়গুলোর মত পৃথিবীর কোলকে আবৃত কছে। এইসব উলটাপালটা ভাবতে ভাবতে জানালা দিয়ে রাত্রীর ভয়াবহ আগমনে পলায়নপর সূর্যের শেষ উঁকিঝুকি দেখে জীবন সায়াহ্নে অলস দিনগুলো কাটাচ্ছে মাহমুদ। ধিরে পরিচিত সব বিদায় নিচ্ছে। কিছুদিন হলো ঘাসফরিং উড়ে গেছে, তার আগে বৃষ্টিরদাগ ধুয়ে মুছে গেছে পৃথিবীর কোল থেকে। বিদ্রোহী প্রাণ নিভু নিভু করে খুব নিচু স্বরে তার নাতনীর সাহায্যে মোবাইলে বিড়বিড় করে অস্পষ্ট স্বরে। ওদিকে নষ্টালজিকের চুল পেঁকে বুড়ো। তারিক, শিহান সবার বুঝি সন্ধ্যা ঘনালো। একসময় এই রঙ্গীন জগতের সব রঙই চোখে ধুসর হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু তখন আসলে কোন চশমা লাগিয়েও জগতের রঙ গুলোকে ফ্যাকাশে হওয়া থেকে নিস্তার দেয়া যায় না। ওটাই আসলে ধারিত্রীর র

নামাজি কাজ ফেলিয়া

আজ নামাজি কাজ ফেলিয়া ছুটিছে দেখ সিজদাতে, এমনি করে জগত ভরে হোক জমায়েত রোজ রাতে। খোদার ঘরে দরুদ পরে হাজার হাজার মুসলমান; দোর খোলা দিল পথ ভোলা দিল সবমিলে আজ উজাড় প্রাণ। হয় মুসাফির বছর ভুলে আজ কেবলি ঝুকলো শির। কেমন করে আঙ্গুল তোল? তুমিই কে বা মহান পীর? খোদার কাছে কাঁদল অবুঝ কাঁদল পাপী, কদরদান। কান্নাটা তো আসল ছিল, হোক না সে খুব অচলপ্রাণ! এইচ আল বান্না © 2017

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??

হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু?? জীবনকি এভাবেই তোমাকে বহমান স্রোতধারায় ভাসিয়ে নিজ়ে যাবে?? আজ কোনো কঠিন শব্দ গুচ্ছ আমাকে আক্রমন করেনা... আমি নিজেই আপন ব্যাথায় আহত... বুকের কোথাও খেজুর কাঁটার খোঁচার মতো তীক্ষ্ণ ব্যাথা ধীরে প্রশস্ত অবয়ব নেয়... নিয়ে নেয় একাই পর্যদুস্ত... পরাজিত হয়ে গেলে তুমি?? তুমি না বিজয় শেখাও??? তুমি না আকাশকে পকেটে পুরে মেঘের হাওয়াই মিঠাই আপন মুখে আপন সুখে সুখ মেলাও!! দেখবে কোথায় আকাশ লুকায় কান্না ঝড়ায় পাহাড় গায়ে নয়তো কোথাও বিষন্নতাও ডুকরে কাঁদে মাঝির নায়ে একটু ধারে জীবন পারে কোন বেহালা বাদক বসে... ভেজায় তাহার আপন সুরে এক অবেলার দূঃখ রসে? উত্থান পতনের ক্রমাগত আঘাতে বেসামাল জীবন তোমার... আমিও ভাবি... হয়তো বেশী দিন নেই, আমার দুখের পাপড়ি ভাঙ্গার... অনেক সুখেই কাটছে আমার দিন প্রতিক্ষন সন্ধ্যা লগন... একজনাকেই সব শপেছি... প্রার্থনাতে তাই জপেছি... অনেক কষ্ট আর বেদনা নিয়ে তুমি পালিয়ে যাবে?? তিনিকি এর চেয়েও বেশী কষ্ট কাউকে দেননি?? পরীক্ষা করেননি?? হাল ছেড়ে দিলে বন্ধু??