তোমার জায়নামাজের মখমলে বসে জল ঢেলে দিতে দিতে
খুব অন্যায় করে ফেলেছি। পুরো জগ খালি করে দিয়েছি। আমি জানি
জানি তুমি প্রচন্ড রাগে চোখ বড় বড় করে আমায় শাষাবে।
তবুও আমি নির্বিকার।
অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মত অত কষ্ট দেইনি তোমায়-
কেবল একদিন ঘুম থেকে উঠে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে কি যেনো কি বলেছিলাম
তুমি কষ্ট পেয়েছিলে। কাল মনে হয়েছিলো তাই ফোন করে বলেছিলাম---
সেই শৈশবে সুদুর দেশে যখন আমি পরবাসী হবার পথে- আমায় জড়িয়ে ধরে
সেকি কান্না!! অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো তখন। আমারও ঢোক গেলার যায়গায়
ক্রিকেট বলের মত একটা প্রকান্ড ব্যাথা জমে ছিলো।
নিয়ম মত তোমার চিঠি এলে বাউন্ডারীর লাগোয়া ডাকঘরের শুকনো লোকটা
হাঁক ছেড়ে বলতো- হাসান আল বান্না, ৭ম শ্রেণী। বুকটা টিপ টিপ করতো।
একটা চিঠিই ছিল তুমি ও তোমার সব ঘ্রাণ।
হোষ্টেলের সবাই ঘুমিয়ে গেলে টেবিল লাইটের হালকা নরম আলোয়
তোমার স্বচ্ছ স্ফটিকের মত চকচকে হাতের লেখাগুলো মুক্তোর মত জ্বলজ্বলে
যেনো আকাশের তারকারা ঠাঁই নিয়েছে মর্তের এক মায়াবীনীর চিঠিতে,
আমার কলিজার টুকরা, সোনা মানিক--- মনে হলো রুপকথা থেকে তুলে আনা
শব্দমালা চোখের সামনে ভেসে বেরাচ্ছে।
সেবার যখন তুমি আমায় দেখতে জেলখানার গেইটে গেলে
আমার হাসি দিয়েই তোমার বেদনা ভরা চোখগুলোকে আড়াল করে রেখেছিলাম।
ভেবেছ আমি বেশ সুখেই আছি। আসলেই সুখে ছিলাম, জানো?
নানান কিসিমের মানুষ
আর নানান কিসিমের কান্ডকারখানা।
কেবল রাতভর সিজদায় কান্না করেছ তুমি,
জানি, জানি আমার সেই ২৬ দিনের একটি দিনও ঘুমাও নি।
লঞ্চের কেবিনে ডান্ডা বেড়ী হাতেপায় সন্তানকে দেখে খুব মুষড়ে পড়েছিলে?
আমার মুখে হাসি ছিলো অমলিন, জানিনা অত সাহস ঐটুকু বয়সে কিকরে পেয়েছিলাম।
জানতাম কেবল হাসিমুখই পারে তোমাকে অশ্রু থেকে ফারেগ রাখতে;
তবুও হাউমাউ করে সেকি কান্না!! তোমার উষ্ণতা পেয়েছি।
এটা ছিলো বড় হবার পর ২য় বার আমাদের আলিঙ্গন।
মুক্তি----- আমি মুক্ত হয়েই ছুটেছিলাম তোমার কোলে।
একটাই নির্ভরতা, খুব নিরাপদ।
মনচায় তোমাকে নিয়ে আসি আমার এই নিঃসঙ্গ জীবনের বারান্দায়।
আমার একলা ঘরে।
কিন্তু এটা যে মিথ্যা আর মেকি সভ্যতার শহর
মাগো তুমি আসবে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন